বুধবার, অক্টোবর ৩০, ২০২৪
Led05আদালতস্বাস্থ্য

অপ্রয়োজনীয় সিজার দ্রুত বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিকে তৈরি করা নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশনের নিবারণের লক্ষ্যে গাইড লাইন তৈরির ৬ মাসের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া এ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে বলেছেন আদালত। অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার (সিজারিয়ান) বন্ধে হাইকোর্টে জমা দেওয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা রায়ে যুক্ত করেছে আদালত, এর ফলে এটি আইন হিসেবে বিবেচিত হবে বলেছেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।

সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিকে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন প্রতিরোধে কার্যকর তদারকি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে কয়েকদিন শুনানি শেষে অপ্রয়োজনীয় সিজার কার্যক্রম বন্ধে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ হাইকোর্ট এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার (সিজারিয়ান) রোধে একটি নীতিমালা তৈরিতে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোহাম্মদ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এক মাসের মধ্যে ওই কমিটি গঠনে করে কমিটিকে ছয় মাসের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করে আদালতে দাখিলের নির্দেশনা দেন আদালত। সেই সঙ্গে রুল জারি করেন। রুলে সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিকে মেডিক্যালি অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন প্রতিরোধে কার্যকর তদারকি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

ওইদিন রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একটি আদেশ দিয়েছেন। তারা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি করবেন এক মাসের মধ্যে। ছয় মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা কোর্টে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। নীতিমালার মূল বিষয় হবে যে মেডিক্যালি অপ্রয়োজনীয় যে সিজারিয়ান সেকশনগুলো হচ্ছে-এটার হার যে বৃদ্ধি হয়ে যাচ্ছে সেটা কমানোর।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগের বেশি সি-সেকশন কোনো দেশেরই প্রয়োজনীয় হতে পারে না। বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে এটা প্রায় ৩১ শতাংশ। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৮৩ শতাংশ এবং সরকারি হাসপাতালে এটার হার ৩৫ শতাংশ। এনজিও হাসপাতালগুলোতে ৩৯ ভাগ। এই যে একটা এলার্মিং রাইজ, রেটটা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে এটাকে থামানোর জন্য এ মামলা।’

আদালতে চীন এবং ব্রাজিলের উদাহরণ তুলে ধরেছি উল্লেখ করে রাশনা ইমাম বলেন, ‘চীনে সি-সেকশনের হার বিশ্বের মধ্যে খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নুতন রুলস রেগুলেশন প্রণয়নের কারণে এটা কমছে। ব্রাজিলেও একই জিনিস দেখতে পেলাম।’

তিনি বলেন, ‘গ্রাম-গঞ্জে যে বেসরকারি হাসপাতাল আছে সেগুলো কোনো ধরনের সরকারি মনিটরিং ছাড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সি-সেকশন করে যাচ্ছে। এটা থেকে অনেকের অমানবিক মৃত্যুও ঘটেছে।’

একই বছরের ২০১৯ সালের ২১ জুন বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ। বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, এতে বাবা-মায়েদের সন্তান জন্মদানে ব্যাপক পরিমাণে খরচের ভার বহন করতে হচ্ছে।

সিজারিয়ানের কয়েকটি ঝুঁকি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় দীর্ঘ সময় লাগে। এছাড়া সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে খরচ করেছেন প্রায় চার কোটি টাকার বেশি। জনপ্রতি গড়ে তা ছিল ৫১ হাজার টাকার বেশি। সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানের হার বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মারাত্মক হারে বেশি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যত শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে।

সংস্থাটি আরও বলছে, ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু তারপরও এমন সিজারিয়ান হচ্ছে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ৪ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন এমন অপ্রয়োজনীয়ে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ঠেকাতে ডাক্তারদের ওপর নজরদারির পরামর্শ দেয়। এমন প্রবণতার জন্য সংস্থাটি আংশিকভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবাখাতের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

RSS
Follow by Email