বুধবার, অক্টোবর ৯, ২০২৪
Led03রাজনীতি

‘গ্রীন সিগনাল’ পেলো নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সম্মেলনের প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ হতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল ইতিমধ্যেই পৃথক পৃথক ভাবে ৭৫ সদস্যের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া এনসিসি মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী আলাদা ভাবে আরও একটি তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টিতে নেতা-নেত্রীদের মধ্যে চরম এক প্রতিযোগিতা চলছে।

তবে, দীর্ঘ অপেক্ষার পর ‘গ্রীন সিগনাল’ পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। খুব শীগ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে পারে, এমনটাই আভাস মিলছে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। এখন সবাই তাকিয়ে আছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে।

এদিকে, আসন্ন নির্বাচন, দলীয় কোন্দল ও বিভিন্ন কমিটি গঠনসহ নানান বিষয় নিয়ে আগামী ১৯ অক্টোবর নারায়য়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। যাতে জেলার আওয়ামী লীগ দলীয় জনপ্রতিনিধিদেরও উপস্থিত থাকবেন। বর্ধিত সভায় দলটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

নেতাকর্মীদের মতে, সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার কোন্দল ও প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা অনুযায়ী নেতৃবৃন্দদের অবস্থান পরিস্কার হতে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন। যার রিপোর্ট সোজা পৌছে যাবে দলীয় সভানেত্রীর হাতে। আর সেই অনুযায়ী আসতে পারে কমিটি।

তৃণমূলেল নেতাকর্মীদের দাবী, ‘ওয়ান ম্যান শো’ নেতা হিসেবে পরিচিতদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা উচিত হবে না। যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, দলে যাদের ত্যাগ আছে; এমন নেতৃবৃন্দদের দ্বারা কমিটি গঠন হলে উজ্জিবিত হবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনেও রাখতে পারবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। কেননা বিগত কমিটিতে এমন অনেক নেতৃবৃন্দ ছিলেন যারা ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসলেও নেই তাদের কোন কর্মী-সমর্থক। শীর্ষ পর্যায়ের কোন এক নেতা কিনবা জনপ্রতিনিধির সাথে থাকায় বিভিন্ন সভা সমাবেশে স্টেজের মধ্যে বরাদ্দ পেতেন চেয়ার।

জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমাবেশর এক পর্যায়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদেরের কাছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কমিটি গুলো দেয়ার অনুরোধ জানান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এরই প্রেক্ষিতে মঞ্চে উপস্থিত আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে কমিটি গুলো দ্রুত দেয়ার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন কমিটি হওয়া তো খুব দরকার। আমাদের নেতৃবৃন্দরা এর জন্য অধিক আগ্রহে বসে আছেন। এই বিষয়ে আমাদের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হবে। এরপর দেখা যাক কবে কমিটি দেয়া হয়।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল বলেন, ‘মির্জা আজম সাহেব আমাদের বলেছেন, খুব তারা তারি কমিটি ঘোষণা করার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কবে কমিটি দেয়া হবে সেটা তো আর বলতে পারি না তবে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা বলেছেন যত তারা তারি সম্ভব কমিটি দিবেন।’

দলীয় সুত্রমতে, দীর্ঘ ২৫ বছর পর গত বছরের ২৩শে অক্টোবর ওসমানী স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সেদিন সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আগামী তিন বছরের জন্য ২য় বারের মতো আবদুল হাইকে সভাপতি ও আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য ও নানাবিধ সমস্যার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথক পৃথকভাবে ৭৫ সদস্যের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন।

ওদিকে পৃথকভাবে দুটি কমিটি জমা হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আবার প্রস্তাবিত কমিটিতে যে সকল নেতাদের নাম বাদ পড়েছে বা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে তারা দৌড়ঝাঁপ করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে। তবে দৌড়ঝাঁপ যারাই করুক বিতর্কিতদের যেন কমিটিতে ঠাঁই দেয়া না হয়, এমন দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

দলীয় সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালের ২০শে ডিসেম্বর। অধ্যাপিকা নাজমা রহমান সভাপতি ও এমপি শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এরপর ২০০২ সালের ২৭শে মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেয়া হয়। ২০১১ সালের ৩০শে অক্টোবরের সিটি নির্বাচনের পর আহ্বায়ক এস এম আকরাম আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় যুগ্ম-আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামকে। ২০১৪ সালের ১১ই ফেরুয়ারিতে মফিজুল ইসলাম মারা যান। এরপর ২০১৬ সালের ৯ই অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের তাৎকালীন প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে সভাপতি এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এডভোকেট আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫শে নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

RSS
Follow by Email