শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Led02রাজনীতি

এনসিসি’র বাজেট ‘গণমূখী নয়’ বললেন আ.লীগ-বিএনপি, ট্যাক্স কমানোর দাবি সচেতন মহলের

#মেয়রের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারিনি: আব্দুস সালাম
#দেড় যুগে সমস্যার সমাধান করতে না পারা ব্যর্থতা: রাজু আহম্মেদ
#বিশুদ্ধ পানি না পেলে ট্যাক্সটা বন্ধ রাখা উচিৎ: নূর উদ্দিন
#মেয়র নগরবাসীর উপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে: তৈমুর আলম
#সমন্বয় করে কোন উন্নয়ন হচ্ছে না: এড. সাখাওয়াত
#শুধু রাস্তা বানালে নাগরিক সুবিধা হয় না: টিপু
#স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ হয়েছে, পর্যাপ্ত না: খোকন সাহা
#যে পরিমান ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে, ভালো লক্ষণ না: সাজনু
# ট্যাক্স বাড়ানো তো মেয়রের একক ক্ষমতা নাই: উজ্জ্বল


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত বাজেট ‘জনগণের উপর ট্যাক্সের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে’ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। একই কথায় সুর মিলিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেছেন, ‘এই বাজেটে যানজট, জলাবদ্ধতা, বিশুদ্ধা পানি, ডেঙ্গু, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কোন উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।’ আর সচেতন নাগরিকরা বলছে, ‘ট্যাক্স কমানোর কথা’।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এমন দাবি করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও সচেতন নাগরিক সমাজ। তাদের মতে, ঘোষিত বাজেট চলমান জীবন ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে বলে মনে করেছেন।

৬৯৫ কোটি ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৯ টাকার বাজেট গত ১১ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। গত অর্থবছরের তুলনায় এ বাজেটে ১০৭ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের ৬৭২ কোটি ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯১৪ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। উদ্বৃত্ত রাখা হয়েছে ২২ কোটি ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৫ টাকা।

সচেতন মহল:
বাজেট নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়েন সভাপতি আব্দুস সালাম লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি বাজেট অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত ট্যাক্স কমিয়ে পূর্বের ট্যাক্স বহাল রাখার দাবি করেছিলাম। কিন্তু মেয়র যে উত্তর দিয়েছে, সেটাতে আমি সন্তুষ্ট হতে পারি নি। কারণ তিনি বলেছেন, সিটি কর্পোরেশনের খরচ বেড়েছে তাই টেক্স বাড়ানো হয়েছে। অথচ, সিটি করপোরেশন যদি সকলের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করতে পারতো, তাহলে অর্থ সমস্যা থাকার কথা নয়।

নিউজ পেপার ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক রাজু আহম্মেদ লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নগরবাসী টেক্স দিচ্ছে কিন্তু কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। পৌরসভা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন পর্যন্ত জার্নিটা প্রায় দেড় যুগের, দীর্ঘ এই সময়ে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করতে না পারাকে আমি সংশ্লীষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখবো। এক পশলা বৃষ্টিতে পুরো শহর ডুবে যায়।

‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি নূর উদ্দিন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, মশক নিধন কর্মসূচি গুলো যদি আরও জোরদার করা যেতো তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। অন্যান্য জেলা গুলোতে মশক নিধনের জন্য যেভাবে কাজ করছে, তার তুলনায় আমাদের সিটি কর্পোরেশন তেমন কাজ করছে না। হোল্ডিং টেক্স কমানো জন্য মেয়র মহোদয়কে আমরা বলেছি, কিন্তু তিনি সেটা স্পষ্ট করতে পারেনি। আমরা পানি সুবিধাও ঠিক মতো পাই না। আমরা প্রস্তাব রেখেছি যতদিন বিশুদ্ধ পানি সেবা না পাচ্ছি ততদিন আমাদের ট্যাক্সটা বন্ধ রাখবো বা কমানো উচিৎ। কিন্তু মেয়র মহোদয় তিনি সেটাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি।

বিএনপি:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে সাবেক মেয়র প্রার্থী ও সাবেক জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এড. তৈমুর আলম খন্দকার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর নাগরীক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সিটি করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব করেছিলাম। অথচ, সিটি করপোরেশন গঠনের পর মেয়র নগরবাসীর মাথার উপর বুঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ফুটপাতে বসা গরীব অসহায় মানুষদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। লেক, পার্ক দরকার আছে কিন্তু মানুষের জীবন মান উন্নয়ন আরো বেশি জরুরী। অটোরিক্সা, রিক্সাসহ তাদের কোন সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ও যানজটের কোন সুব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জলাবদ্ধতা নিয়ে কোন উদ্যোগ দেয়া হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের রাস্তায় শুয়ে থাকা মানুষ ও শিশুদের পড়াশোনা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিৎ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে সাবেক মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, সিটি অনুযায়ী বাজেটের পরিমান অনেক কম ছিলো। যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেই অনুযায়ী অনেক কম। সিটি কর্পোরেশনে পরিকল্পনা করে কিছু করা হচ্ছে না এবং সমন্বয় করে কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। যে বাজেট তিনি করেছে আমার মনে হয় না এটা দিয়ে কোন উন্নয়ন সম্ভব। নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু, চলাচলে বিঘ্নতা দূর করণে তেমন কোন বরাদ্দ নেই। বাজেটে নগরীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থায় তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। নারায়ণগঞ্জ যানজটের শহর, এখানে কোন ফ্লাইওভার নাই। যানজট নিরসনে কোন ব্যবস্থা নেই।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব এড. মো. আবু আল ইউসুফ খান টিপু লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এই বাজেট মানুষের জন্য না। কারণ যেখানে টেক্স কমানো হয় না, পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নাই, ওয়াসার পানি পায় না, নগর জুড়ে যানজট। শুধু রাস্তা বানালে ও বড় করলেই নাগরিক সুবিধা হয় না। নাগরিক সুবিধার জন্য পরিকল্পিত নগরায়ন দরকার। এতো ট্যাক্স কিভাবে দিবে। কারণ নগরের সবাই বড়লোক না। সিটি কর্পোরেশন রাস্তার কাজ করলে ১ বছরের মধ্যে সেটা ভেঙ্গে যায়। নারায়ণগঞ্জে যানজট নিরসন খুব প্রয়োজন একইভাবে দক্ষ পুলিশ দ্বারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ।

আওয়ামী লীগ:
একই ধরণের কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট কোন ভাবেই গণমুখী হয়নি। সারাদেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রকোপ, সেখানে নারায়ণগঞ্জ তো ডেঙ্গুর কারখানা, স্বাস্থ্য খাতে ও ডেঙ্গুর জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেই বাজেট পর্যাপ্ত না। ওয়াসার পানির জন্য যে বাজেট রাখা হয়েছে, সেটাও পর্যাপ্ত না। নারায়ণগঞ্জে এক পশলা বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাটে পানি জমাট হয়ে যায়। তাই ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য বিশেষ বাজেট রাখার প্রয়োজন ছিলো, সেটা রাখা হয়নি। তাই আমি জোর গলায় বলবো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট গণমূখী বাজেট না।

নারায়ষগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য না। যে পরিমান ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে, এটা মোটেও ভালো লক্ষণ না। খুব শীঘ্রই আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এভাবে ট্যাক্স বাড়ানো আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। আমার দাবি থাকবে এটা যাতে কমিয়ে দেয়া হয়। যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের অবশ্যই ভূমিকা আছে। সেখানে উচিৎ তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়ত করতে পারে ও ট্যাক্স কমানো হয় এই দাবি থাকবে মেয়রের কাছে।

তবে, ভিন্ন মত প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোট ভাই আহম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট মোটামুটি ভালো হয়েছে। কারণ কিছুনা কিছু ভুল তো থাকবেই। কিছু ভালো কাজ করতে গেলে সমালোচনা তো হবেই। খারাপ কাজে সমালোচনা হলে ভালো কাজেও হবে। মানুষের কল্যাণের জন্য মোটামুটি ভালোই হইছে। আর ট্যাক্স বাড়ানো তো মেয়রের একক ক্ষমতা নাই। অবশ্য আমাদের (আওয়ামী লীগের) নিজেদের মানুষই বলে ট্যাক্স দিয়েন না, এটা তো সরকার বিরোধী কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

RSS
Follow by Email