শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Led02জেলাজুড়েবন্দরবিনোদনসোশ্যাল মিডিয়া

বন্দরের ছেলে আফ্রিকান বধূ, ভাইরাল দম্পতিকে দেখতে ভিড়

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সাজেন হোসেন। বাবা-মায়ের আদরের পাশাপাশি পেয়েছেন ৩ বোনের স্নেহ। ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো বিলেতি মেয়ে বিয়ে করবেন। তার সেই ইচ্ছাকেই প্রধান্য দিয়ে কখনো নিরুৎসাহিত করেনি বাবা-মাও। সাজেন উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পার করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পাড়ি দেন বাহরাইনে। সেখানে কয়েক বছর কাটিয়ে ২০১৮ সালে চলে যান আফ্রিকার সী সেলস আইল্যান্ডে। সেখানে পরিচয় হয় অবিবাহিতা তরুণী ফ্রান্সসিসকার সঙ্গে, সেই থেকেই প্রেমের সম্পর্ক আর একপর্যায়ে পরিবারের সম্মতিতে ৩ বছর আগে হয় তাদের বিয়েও।

শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা মেলে ওই দম্পতির। এদিকে, প্রেমের টানে আফ্রিকা থেকে নারায়ণগঞ্জে যুবকের কাছে ‍ছুটে আসা তরুণীকে, এক নজর দেখতে বিভিন্ন এলাকায় থেকে প্রতিনিয়ত ভীর জমাচ্ছে উৎসুক জনতা। ইতোমধ্যে এই বিলেতি বধূ ফ্রান্সসিসকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়েছে। নেট দুনিয়ায় রিতিমত ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় একাধিক গণমাধ্যমে জায়গা পেয়েছে এই নারায়ণগঞ্জ-আফ্রিকান দম্পতি।

ফান্সসিসকা (৩০) আফ্রিকার বংশোদ্ভূত তরুণী। তিনি দেশটির স্থানীয় একটি বিমানবন্দরের সিনিয়র ম্যানেজার ও ট্রভেলস এন্ড ট্যুর প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে কর্মরত আছেন। অন্যদিকে সাজেন হোসেন (২৭) নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ত্রিবেণী এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে।

জানা যায়, সাজেন হোসেন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে প্রবাসে পাড়ি জমান। সদূর বাহরাইনে কয়েক বছর কাটিয়ে ২০১৮ সালে চলে যান আফিকার সী সেলস আইল্যান্ডে। সেখানে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সেফ হিসেবে চাকরি নেন তিনি। ফান্সসিসকার সঙ্গে পরিচয় নিয়ে সাজেন হোসেন জানান, হোটেলে অফিসের কাজে প্রায় সময় আসা যাওয়ার সুবাদে ২০২০ সালের নভেম্বরে সাজেনের পরিচয় হয় ফ্রান্সসিসকা’র সাথে। অল্পদিনেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ছেলে সাজেন হোসেনের সাথে। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালে নিজ নিজ পরিবারের মতামত নিয়ে সেখানে বিয়ে করেন তাঁরা।

সাজেন হোসেনের পরিবার জানায়, দীর্ঘ সাত বছর প্রবাস থেকে ছুটি নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জের নিজ বাড়িতে আসেন সাজেন। এরপর স্বামীকে দেখার জন্য ১৪দিনের ছুটি পেয়ে ২ ফেব্রুয়ারি তরুণী ফ্রান্সসিসকাও চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। রাজধানীর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিদেশি বধূকে বরণ করে বাড়ি নিয়ে যান সাজেন ও তার পরিবারের সদস্যরা।

আফ্রিকান তরুনী ফ্রান্সসিসকা গণমাধ্যমে এক সাক্ষাতে বলেন, স্বামীর বাড়ির মানুষ আমাকে এতো আদর যত্ন করছেন, এতো ভালোবাসা দিচ্ছেন, এতে আমি মুগ্ধ। আমি ভাবতেই পারিনি বাংলাদেশের মানুষ এতো ভালো, এতো আন্তরিক এবং এতো উদার। আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই খুব আদর ভালোবাসা ও সম্মান পাচ্ছি। আমার স্বামীর পরিবারের মধ্য দিয়ে আমি বুঝে নিয়েছি পুরো বাংলাদেশের মানুষ ওদের মতোই।

স্ত্রীর প্রশংসায় প্রবাসী সাজেন হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশি মুসলমান যুবককে বিয়ে করার পর থেকে আফ্রিকান তরুণী ফ্রান্সসিসকা পশ্চিমা সংস্কৃতি ও ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ হারাম খাবার পরিহার করে ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধান মেনে চলছেন। ক্লাব, বার ও পার্টিতে যাওয়া বাদ দিয়ে পোশাক আশাকেও বজায় রাখছেন ভদ্রতা ও শালীনতা। এমন স্ত্রী পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছেন সাজেন।

সাজেনের বাবা আবদুস সাত্তার গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ছেলে আফ্রিকান মেয়ে বিয়ে করেছে। আমার ছেলে তার বউ নিয়ে দেশে ফিরেছে। ছেলে ও বৌমাকে দেখে আমি অনেক খুশি। আমার খুব আনন্দ লাগছে। বৌমা অনেক ভালো মেয়ে।

সাজেনের মা আফসানা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, সাজেন আমাদের একমাত্র ছেলে। ছোটবেলা থেকে আমার ছেলে বলতো তার খুব শখ সে বিদেশে যাবে। বিদেশে গিয়ে বিদেশি মেয়ে বিয়ে করবে। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। আমাদের বিদেশি বৌমা অনেক লক্ষ্মী। কোনো অহংকার নেই। আমার পরিবারের সবাইকে খুব আপন করে নিয়েছে। মুরুব্বিদের সম্মান দিয়ে কথা বলে। তার আন্তরিকতা ও ব্যবহারে সবাই বিদেশি বৌমার খুব ভক্ত হয়ে গেছে। এমন পুত্রবধূ পেয়ে আমরা খুবই গর্বিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

RSS
Follow by Email