শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
অন্যান্যগণমাধ্যমমতামত

ভূয়া সাংবাদিকদের থামান

হাবিবুর রহমান বাদল: নানা কারনেই বছর জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ। হউক সেটা রাজনৈতিক কিংবা অপরাধ সংক্রান্ত। তবে, এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপেশাদার সাংবাদিকদের দৌরাত্ব্য। নারায়ণগঞ্জ জেলায় জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকার পেশাদার সাংবাদিকদের সংখ্যা কত এই পরিসংখ্যান কোন গোয়েন্দা শাখার কাছে আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে শতাধিক হবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এবার দ্বাদশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১৩শ’র অধিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক কার্ড প্রদান করে রির্টানিং কর্মকর্তা। এখন প্রশ্ন হলো নারায়ণগঞ্জে এত সাংবাদিক কোথা থেকে আসলো? আর নির্বাচন কমিশনও কোন ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়া কিভাবে পর্যবেক্ষক কার্ড বিতরন করলো? তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকা কথিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ কি ব্যবস্থা নিয়েছে? সার্বিক দিক বিবেচনায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে কথিত সাংবাদিকদের কারনে পেশাদার সাংবাদিকদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়! এখন প্রশ্ন হচ্ছ, কবে ঘুম থেকে জাগ্রত হবে নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে এবার সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কিত প্রত্যায়নপত্র ছাড়া অন্য কাউকে নির্বাচন পর্যবেক্ষন সাংবাদিক কার্ড প্রদানে বিধি নিষেধ জারি করেছিল। তেমন একটা সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার প্রত্যায়নপত্র যাচাই বাছাই ছাড়াই সাংবাদিকদের কার্ড প্রদান করা হয়। যে কারণে অপেশাদার বেশীরভাগ সাংবাদিকদের বুকে এইসব কার্ড ঝুলতে দেখা যায়। আর এ কারণে পেশাদার সাংবাদিকরা অনেকটা নিজেদের লুকিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেছে। এ ব্যপারে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ভ’মিকা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়ে কথিত কার্ডধারী সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য চরম ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চা-বিক্রেতা, ব্যাংকের দারোয়ান, রাজমিস্ত্রি, দলিল লেখক, মাছ ব্যবসায়ী, হোটেল বয়, গাড়ীর ড্রাইভার, বাসার দারোয়ান, ঠিকাদার ও এনজিও কর্মী এরা সবাই সাংবাদিক। এ সকল তথাকথিত কার্ডধারী সাংবাদিকদের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না এলাকার রাজনৈতিক নেতা, গন্যমান্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ। আর এইসব অপেশাদার কথিত সাংবাদিকদের ফাঁদে পড়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ সাধারণ মানুষ হয়রানি শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে ওইসকল কথিত নামধারী সাংবাদিকরা নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বত্র বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা পেশাজীবী মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। যা সৎ সাংবাদিকতা আর প্রকৃত গণমাধ্যমের জন্য হুমকি স্বরূপ! বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ গুলোর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে বিপদগামী করে তুলছে। একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকে শতভাগ সংবাদ প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। সঠিক ও সৎ সাংবাদিকতা সমাজ বদলে দিতে পারে। অথচ কথিত এসব কার্ডধারী নামধারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের ফলে পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রকৃত সাংবাদিকদের বিব্রতকর অবস্থা ছাড়াও জেলায় কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের মাঝেমধ্যে পড়তে হচ্ছে ঝুঁকির মুখে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এসকল ভুয়া সাংবাদিকদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করার দাবি সচেতন মহলের। এক শ্রেণীর মতলববাজ স্ব-ঘোষিত সাংবাদিকদের একটি চক্র ফায়দা নেওয়ার জন্য সাংবাদিকতা বাণিজ্যের ভিড়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিজ্ঞাপন পাওয়ার আশায় অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত ব্যক্তি থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনসহ ভিন্ন ভিন্ন পেশার লোকদের কাছে অর্থের বিনিময়ে কার্ড বাণিজ্য করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নামসর্বস্ব জাতীয়, স্থানীয় ও সাপ্তাহিক পত্রিকার জেলা, উপজেলা পর্যায়ে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে এ-সকল কথিত কার্ডধারীরা রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক। এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সংবাদ লিখতে না জানলেও সাংবাদিক পরিচয়ে জেলা পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি পাশাপাশি থানার দালালি করে বেড়াচ্ছে এসকল কথিত সাংবাদিকরা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভুঁইফোঁড় কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা কার্ডের অপব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় সর্বত্র সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকে। নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে জাহির করে জেলার যেখানে-সেখানে ধান্দায় অবাধে বিচরণ করছে ওইসব সাংবাদিক নামধারীরা। এরা চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরণের অপরাধ অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছে। এছাড়া কিছু মূলধারার সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে সঙ্গ রেখে কথিত সাংবাদিকরা নির্বিঘে তাদের অপরাধ, অপকর্ম চালিয়ে যেতে নামে-বেনামে নিজেরাই গড়ে তুলেছে একাধিক ভুয়া সংগঠন। অন্যদিকে যত্রতত্র চোখে পড়ে, প্রেস কিংবা সাংবাদিক লেখা ভুঁইফোঁড় কিছু পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল, অনলাইন টিভির স্টিকার মোটরসাইকেলে ব্যবহার করে, এক শ্রেণীর নামধারী সাংবাদিকরা অবাধে চষে বেড়াচ্ছে। এরা কিন্তু সবাই সাংবাদিক নন, এদের গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স কোনটাই নেই। ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে সাংবাদিক না হয়েও প্রেস বা সাংবাদিক কিংবা নামসর্বস্ব পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন টিভির স্টিকার মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহার করে পুলিশের সামনে দিয়েই নির্বিঘে দাবড়ে বেড়াচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার কর্মরত দেশের বহুল প্রচারিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ও জেলার সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো জেলা জুড়ে গজে উঠেছে ভূয়া সাংবাদিক। এটি অস্বীকার করার কোন কারণ নেই, তাদের অপরাধ কর্মকান্ডের ফলে মূলধারার সাংবাদিকরা মূল্যায়িত হচ্ছে না। দিন দিন সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। মানুষের কাছে সাংবাদিকরা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ এসব কার্ডধারী সাংবাদিকদের মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পাড় হলেও তাদের কোন সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায় না। সাংবাদিক নেতারা আরো বলেন, এসব কথিত ভুঁইফোঁড় সাংবাদিকরা বিভিন্ন এলাকা দাবড়িয়ে নানা অপকর্ম করে চাঁদাবাজির মহা উৎসবে মেতে উঠেছে। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ-সকল অপকর্মের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আশারাখি এদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন প্রত্যাশা মূলধারার সাংবাদিকদের। কারণ এসব ভ’য়া সাংবাদিকরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিরজন্য কখনো উত্তর মেরুর আবার কখনো দক্ষিণ মেরুর সাথে সখ্যতা করে ইতিমধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। এদের নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা যেমন বিভ্রত তেমনই জনপ্রতিনিধিরাও বিভ্রত। নতুন সরকার এ ব্যপারে কঠোর হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ পেশাজীবী সাংবাদিকদের। আর এ ব্যপারে নারায়ণগঞ্জের সকল সংসদসদস্য মেয়র ও রাজনৈতিক নেতাদের এক টেবিলে বসিয়ে বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব অগ্রনী ভ’মিকা পালন করবে এমনটাই প্রত্যাশা করে সাধারণ মানুষ।

লেখক: হাবিবুর রহমান বাদল,
সাবেক সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

RSS
Follow by Email