মনের ক্ষুধা মেটানো ফুলে পেটের ক্ষুধা মিটছে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ভালোবাসার প্রতীক ফুল। যা মানুষের মনের ক্ষুধা মিটায়। তবে, মুক্ত বাণিজ্যের দিনে ফুল থেকে উপার্জিত আয়ে অনেকেরই পেটের ক্ষুধা মিটছে। সারা বছর ফুলের চাহিদা থাকলেও বছরের অন্য মাস গুলোর চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ মাসেই- আন্তর্জাতিক ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবসসহ বাঙ্গালীর উৎসব পহেলা ফাল্গুন। আর তাই ব্যবসায়ীরাও এ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন। নারায়ণগঞ্জে ‘ফুলের গ্রাম’ খ্যাত সাবদী, এখানকার কৃষকদের এবার প্রায় ৬ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট। তবে, বৃষ্টি ও শীতের তীব্রতার কারণে ফুলের আশানরুপ ফলন না পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। কয়েকশত কৃষকের পাশাপাশি বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ ফুল চাষে জড়িত। তাদের দাবি, সরকার উদ্যোগী হলে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ‘সাবদী গ্রাম’, অনেকের কাছে ‘ফুলের গ্রাম’ নামে পরিচিত। যতো দূর চোখ যায় দেখা মিলে ফুলের সমারোহ। তরুন-তরুনীসহ পরিবার নিয়েও ফুলের রাজ্যে ঘুরতে আসে ফুল প্রেমিরা। নানান রকম ফুলে ঘ্রানে মুগ্ধতা ছড়ায়, মাতাল হয়ে উঠে অপ্রকৃতিস্থ মানুষ। শুধু সাবদীই নয়, বন্দর উপজেলার দীঘলদি, মাধবপাশা, আইছতলা , সোনারগায়ের ফরদী, দরিগাঁও, এলাহিনগর, শম্ভুপুরা, একরামপুরাসহ দশটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হয় সারা বছর। এসব গ্রামের প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ ফুল চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। এ বছরও প্রায় ৮০ হেক্টর আবাদি জমিতে ২৮ ধরনের ফুল চাষ হয়েছে। এখানে বিভিন্ন মৌসুমে নানান ফুলের চাষ করে। তার মধ্যে গোলাপ, জবা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, কেলেন ডগা, কাঠমালতির চাহিদা সব চেয়ে বেশি।
ফুল চাষীরা জানান, আসছে পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবসকে ঘিরে এ বছর প্রায় ছয় কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বর্ষার পানি জমি থেকে নামতে দেরি হওয়ায় ও প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে ফুল চাষে বিলম্ব হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকেও কোন সহযোগীতা করা হয়নি বলে চাষীদের অভিযোগ রয়েছে। ভাল ফলন ও দামের কারণে এ মৌসুমের তিনটি দিবসে বেচা বিক্রি বেশী হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলেও আশা তাদের।
ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, ফুল দেখতে ভালো লাগে, পরিবার নিয়ে এসেছি। ফুলের চাষ কমে যাচ্ছে। আরও ফুল লাগানো হোক। বসন্তের আগাম টানে চলে আসি প্রকৃতির এই সুন্দর দেখতে। এখানে আসলে নানা রকমের ফুল মুগ্ধ করে দেয়। নিজের জন্য ও বাচ্চাদের জন্য ফুল কিনেছি, অসুস্থ ছিলাম এখানে এসে সুস্থ হয়ে গেছি। এমন ছোট ছোট বাগান আরও করা হোক, তাহলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ আসার একটা জায়গা পাবে।
বন্দর থানা ফুল চাষী ও ফুল ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাতেন জানান, জমি থেকে পানি নামতে বিলম্ব ও প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে এ বছর ফুল চাষ সময়ের কিছুটা পরে হয়েছে। তবে ভাল ফলন ও বাজারে ভাল দামের কারণে কৃষকরা এ মৌসুমে প্রায় ৪/৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা যাবে, এর পরও বাকি মাস গুলোতে বিক্রি হবে, টার্গেট পূরণ হয়ে যাবে। আর ফাল্গুন জুড়ে নানা অনুষ্ঠান থাকে এবং সারা বছরই ফুল বিক্রি হয় ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তাইজুল ইসলাম জানান, বন্দর উপজেলার ফুল চাষীদের সব রকম সরকারি সহযোগিতা করা হয়। দেশি ও বিদেশেী জাতের ফুল চাষে প্রশিক্ষন, জমি মনিটরিং সহ স্বল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋন নিতে সহযোগিতার করা হয়। তিনি জানান এ বছর ৮০ হেক্টর আবাদি জমিতে ফুল চাষ হয়েছে।
অতীতে ফুল কেবল মানুষের মনের ক্ষুধা মেটালেও এখন মুক্ত বাণিজ্যের দিনে ফুল থেকে উপার্জিত আয়ে অনেকেরই পেটের ক্ষুধা মিটছে। কৃষি প্রধান এ দেশে ফুল চাষের সম্ভাবনা বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে বলে মনে করেন সচেতন মহল।