শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Led01অর্থনীতিজেলাজুড়েফতুল্লা

হুমকির মুখে না.গঞ্জের নিটওয়্যার শিল্প

# প্রায় ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ, ৩ লাখ শ্রমিক বিপদগ্রস্থ: সেলিম ওসমান
# বর্ধিতহারে মূল্য দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি না: মোহাম্মদ হাতেম

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গেলো কয়েকমাস ধরেই নারায়ণগঞ্জের অন্যতম নিটওয়্যার শিল্পাঞ্চল বিসিকে গ্যাসের চাপ একেবারে কমে গেছে। দেশের রফতানিমুখী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন কারখানায় বন্ধ হয়ে পড়েছে উৎপাদন। যেগুলোতে উৎপাদন চলছে সেগুলোও বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়। ফলে রফতানিমুখী গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার বাতিল হওয়ার আশংকায় রয়েছে ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ আছে বিভিন্ন কারখানায়। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা অনেকটা অলস সময় কাটান। মালিকপক্ষ তাদেরকে না পারছেন ছাঁটাই করতে না পারছেন কাজে লাগাতে। বসিয়ে রেখেই তাদের বেতন দিতে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশের নিটওয়্যার শিল্পের বড় একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা বিসিক এলাকায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই রফতানিমুখী। সম্প্রতি এসব এলাকায় গ্যাসের সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই কারখানা কোনো রকমে চলছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের একাধিক ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে রফতানি আয়ও মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দাবি এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশি ক্রেতারাও এক সময় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।

বিকেএমইএ’র সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেছেন, আমরা বহুবার গ্যাসের সমস্যা চেষ্টা করে দূর করতে পারছি না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি গুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক বিপদগ্রস্থ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি ডিসেম্বর মাসের বেতন গুলো তাদের দিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা এক্সপোর্ট করতে পারি নাই। আমরা আমাদের মাল গুলো নিদ্রিষ্ট সময়ে তৈরী করতে পারি নাই তার উপর নির্বাচন ছিলো, এখন আবার জানুয়ারি মাসের বেতন দেয়ার সময় চলে আসছে। ডিসেম্বরের বেতন আমরা দিয়ে দিবো কিন্তু নভেম্বরের বেতন আমরা করতে পারি নাই। এছাড়া সময় মতো আমরা বেতনটা বাড়াতেও পারি নাই। কারণ ফ্যাক্টরি গুলো একেবারে অচল হয়ে গেছে।

 

তিনি আরও বলেন, আমরা নিট ব্যবসা করি যারা আমাদের ৩টা জিনিস খুব প্রয়োজন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি। সব চেয়ে বেশী যেটা লাগে সেটা হলো শ্রমিক যাদের জন্য আমরা টিকে আছি। শ্রমিকের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক থাকলেও একটা শ্রমিকের পক্ষে সম্ভব না বেতন ছাড়া কাজ করা। যেখানে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে, এখানে আমরা আর কদিন চলবো। সংকটের মধ্যে ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান থেকে বের হতে হবে, সেটার জন্য আমাদেরকে দায়ী করা যাবেনা। একটাই কারণ, সব কিছুর দাম বেড়েছে। দাম বাড়লেও আমরা কিন্তু আজ কিনে খেতে পারছি, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আজ এতো ভালো। কিন্তু গ্যাসই যদি আমরা না পাই তাহলে কিভাবে আমরা আমাদের শ্রমিকের বেতন বহন করবো। আমরা কিন্তু করোনার পরিস্থিতি কাটিয়ে চায়নাকে পেছনে ফেলে নিটওয়্যারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। শুধু আমাদের সমস্যা একটাই আগে বিদ্যুৎ ছিলো না, এখন সমস্যা হলো আমাদের গ্যাস সরবরাহ নেই। আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি করছি আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা যদি হিসেব করতে যাই তাহলে বাংলাদেশের সব থেকে বেশী আয় করে নিটওয়্যার, আর এর মাধ্যমেই আমরা ফরেন কারেন্সি আনতে পারছি। আর এই জন্যই আজ ৩ থেকে সাড়ে ৩লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের সাথে জরিত। প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যদি চিন্তা করি তাহলে প্রায় ১৫লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এই নিটওয়্যারে।

একই সংকটের কথা উল্লেখ করে, এমবি নিট ফ্যাশন লি. এর মেনেজিং ডিরেক্টর ও বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা যখন সরকারের সাথে বসি। তখন বলেছিলো যে, আমরা যদি বর্ধিত মূল্য দেই তাহলে আমাদের কন্টিনিউয়াসলি গ্যাস দিবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় রাজি হইলাম। সরকার ১২টাকার গ্যাস ৩০টাকা করেছিলো,সেটাও আমরা গ্রহন করেছিলাম। আমরা বর্ধিতহারে ওই মূল্য দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি না। গ্যাস পাওয়ার না থাকায় আমার নিটিং বন্ধ হয়ে আছে। আমাদের ডাইং যেখানে প্রতিদিন ১০০ কেপাসিটি ডাইং থাকে সেখানে ১মাসে মাত্র ৮৫ কেপাসিটি ডাইং আমরা প্রস্তুত করতে পেরেছি। এতে করে আমার কাটিং সুইং বন্ধ হয়ে আছে। পর্যাপ্ত ফেব্রিক্স না পাওয়ায় আমাদের রপ্তানী বন্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে আমার ফেব্রিক্স আমদানিতে চলে যেতে হবে,এতে আমাদের ৫০-৬০ভাগ ইনপুটে চলে যাবে। একদিকে এমনিতেই আমাদের ফরেন কারেন্সির সংকট, এরপর ডলার ক্রাইসিস আরও বড় আকার ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন আমি রপ্তানি করতে পারছি না বলে আমরা শ্রমিকের বেতন দিতে পারছি না, নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারছি না। কোন কোন ফ্যাক্টিরি শ্রমিকের বেতন দিয়েছি স্টাফের বেতন দিতে পারে নাই। আমরা এখনো ডিসেম্বরের শ্রমিকের বেতন দিতে পারি নাই। বাংলাদেশে সকল জোনেই সংকট রয়েছে, তবে নারায়ণগঞ্জ জোনে একটু বেশী সংকট ৩মাস যাবত। আমরা জানতে পেরেছি যতটুকু গ্যাস এখানে আমাদের দেয়া হতো সেটা সার উৎপাদন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে চলে যাচ্ছে। ফলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বন্ধের পথে। সারের তো বিকল্প আছে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির তো বিকল্প নাই। গ্যাস নাই শ্রমিকরা বসে আছে কারণ কাজ নাই, কতদিন আর আমরা এভাবে বসায় বসায় বেতন দিবো। একটা সময় গিয়ে আমরা বাধ্য হবো ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে। গত ১মাসে অনেক গুলো ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। এই বিষয়ে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি চিঠি দিয়েছি, কোন সমাধান পাইনি। আজকে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে একটা চিঠি দিবো, আর যদি উনার হাতে সময় থাকে তাহলে আমরা দেখাও করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

RSS
Follow by Email